মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহীর আদালত চত্বরে দুই কাজিকে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করলেন এক নারী। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ভুক্তভোগী কাজী শাওন। কিন্তু যেহেতু তিনি একজন নারী তাই সম্মান রক্ষার্থে তারা উপস্থিত লোকজন ও পুলিশের অনুরোধে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার আমলি আদালতের সামনে অনেক লোকজনের সামনে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে।
শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন মোঃ মোকাদ্দিম হোসেন শাওন ও নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজি মোঃ মোস্তফা হোসেন। সম্পর্কে তাঁরা দুই ভাই।
ভুক্তভোগী কাজী মোঃ মোকাদ্দিম হোসেন শাওন জানান, হামলাকারী নারী মোসাঃ মুনিয়া আফরোজ মনি। তিনি তিনি সাবেক মেয়র লিটনের আস্থা ভাজন এবং নগরীর শাহমখদুম থানার বড়বনগ্রাম রাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ওই নারী এক ছেলের সাথে দীর্ঘদিন যাবত বিবাহ্ধসঢ়; বহিভূত সম্পর্কে লিপ্ত থেকে সংসার করছিলেন।
পরবর্তীতে মোহনপুরের বাসিন্দা আব্দুল মতিনের মাধ্যমে আমার ভাই কাজি মোঃ মোস্তফা হোসেনকে দিয়ে হামলাকারী নারী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে বিয়ে করেন। বিয়ের পর বর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান গত ১জুলাই বাদী হয়ে ওই নারী ও কাজীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিবাহের অভিযোগে এনে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় সোমবার সকালে রাজশাহীর আদালতে জামিন নিতে আসেন তার ভাই। হটাৎ ওই নারীর সাথে আদালতের সামনে আমাদের দেখা হয়।
এ সময় বিবাহ এবং মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওই নারী চিৎকার করে আমার ভাইকে গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি গালি দিতে নিষেধ করলে আমাকে গালে থাপ্পড় ও লাথি মারে এবং বিভিন্ন জনকে মোবাইলে ফোনে ডাকতে থাকেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমাকে ও আমার ভাইকে উপস্থিত লোকজন ও পুলিশ সরিয়ে দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ করায় বলে অভিযোগ শাওনের।
অপর দিকে মোসাঃ মুনিয়া আফরোজ মনি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই দুই ভাই তার সাথে প্রতারতা করেছে। সম্প্রতি তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বনিবনা না হওয়ায় স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তার স্বামী আদালতে মামলা করেছে। তিনি দেনমোহরের ৩৮ লাখ টাকা পাবেন। এই টাকার জন্য দুই ভাই তাঁকে আপস করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। আপস করে মোটা অঙ্কের টাকা তাঁরা হাতিয়ে নিতে চান। এতে রাজি না হলে তাঁকে কাজী শাওন তাকে লাথি মারেন। এ ব্যাপারে তিনি আদালতে মামলা করবেন বলেও জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুরে আদালত চত্বরে ওই নারীর সঙ্গে কাজী দুই ভাইয়ের কথা-কাটাকাটি হচ্ছিল। একপর্যায়ে রেগে গিয়ে ওই নারী কাজি শাওনকে হগালে থাপ্পড় ও লাথি মারেন। এ সময় বড় ভাই কাজী মোঃ মোস্তফা হোসেন ছোট ভাই শাওনকে ধরে ফেলেন। কিন্তু ওই নারীর চিৎকার চেঁচামেচিতে অনেক মানুষও জড়ো হয়। সবার সামনে প্রকাশ্যেই অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় ওই নারী গালীগালাজ করতে থাকে। পরে পুলিশ এসে ওই নারী এবং দুই ভাইকে দুই দিকে পাঠিয়ে দেন।
আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে দুই কাজীকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুর রকিব সিদ্দিকী বলেন, আদালত চত্বরে কোনো কাজীকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে ওই নারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।